হ্যালো ভিজিটর,
ধন্যবাদ আমার ব্লগে আসার জন্য।😊
কেমন আছেন,আশা করি ভাল আছেন আর আমিও কামনা করি,যাতে আপনি সবসময় ভাল থাকেন আর সুস্থ থাকেন।
গবেষকরা বলেন যারা ভ্রমণে যান তারা আর দশজন মানুষের চাইতে বেশি সুখী হন। ঘরের কোণায় বসে অতীত কিছু ভেবে কিংবা ব্যস্ত জীবনের ফাকে যারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বসে থাকেন তাদের তুলনায় নতুন নতুন জায়গা ঘুরে ফিরে নিজের উপর যে আত্মবিশ্বাস আনতে পারে সেই প্রকৃত সুখী।
হ্যাঁ, এইটাই সত্যি, আর আমিও খুব ভালবাসি ভ্রমণ করা,মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হলে মানুষের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তবে আমিও যতটুকু সম্ভব, ঘুরাঘুরি করার চেষ্টা করি,আর এইবার গিয়েছিলাম সীতাকুণ্ড, চন্দ্রনাথ পাহাড়ে/মন্দিরে ।
হঠাৎ বন্ধু সুজল এর দোকান এ আড্ডা থেকেই শুরু হয় চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত।ঘুরতে কোন জায়গায় যাওয়া যায়,এই নিয়ে কথোপকথন হচ্ছিল আমার আর সুজলের মধ্যে। আমি আর সুজল সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম মাত্র ১০ মিনিটেই। যেই কথা, সেই কাজ।ঠিক করলাম আগামীকাল সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ব,ঠিক পরেরদিন সকালে ঠিক ৭.০০ টা বাজে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম সেই শীতের সকাল এ ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতি নিয়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য😊মনের মধ্যে অনেক আনন্দ কাজ করছিল,কারন এইটা ছিল খাড়া পাহাড় বেয়ে মাটি থেকে ১১৫২ ফুট উপরে উঠার একটা ট্রেকিং।
প্রথমে ভাটিয়ারী আর পরেই পৌছালাম সীতাকুন্ড ষ্টেশনে।
যাই হোক,
অবশেষে ২ ঘন্টা পর আমরা পৌঁছলাম সীতাকুণ্ড স্টেশনে।
ছোট্ট একটা হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম আর অল্প খাবার ব্যাগ এ নিয়ে কিছু সময় বিশ্রাম করে রওনা হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পথে।😊
শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে।
পাদদেশ থেকে পাহাড় বেয়ে উঠার জন্য কিছু বাশ এর চিকন লাঠি নিলাম উপরে বেয়ে উঠতে সুবিধার জন্য,সীতাকুণ্ড তখন বেশ কুয়াশা ছিল। শহরের রাস্তায় হাঁটছি, মনে হচ্ছে সীতাকুণ্ড নয়, যেন কুয়াশার বাড়িতে হাঁটছি। দুজনের গায়ে ছিল জ্যাকেট আর পিছনে ছিল ব্যাগ আর হাতে লাঠি।শুরু করলাম দুজনে হাটা।প্রথমদিকে তেমন কষ্ট না হলেও তিনশো ফুট থেকে আপনাকে উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে। কখনোবা চলতে হবে এক পাশে পাহাড়ের গা ঘেঁষে আর অন্য পাশে খাদ নিয়ে। একবার পা ফসকালেই পড়তে হবে ২৫০-৩০০ ফুট নিচে। কোনও কোনও জায়গায় পথটা এতটাই সরু যে, দুজন মানুষ একসঙ্গে উঠা-নামা করা প্রায় অসম্ভব। মাঝে মাঝে পাবেন প্রাচীনকালের তৈরি সিঁড়ি। কে কত সালে সে সিঁড়ি কেন বানিয়েছেন সাথে আছে তার নামফলকও।
চারদিকে নিরব-নিস্তব্ধ।
মাঝে মাঝে শুনতে পাবেন চেনা-অচেনা পাখির ডাক। দেখতে পাবেন ছোট ছোট ঝরনাও।এত শীতের আর কুয়াশার মধ্যেও আমাদের শরীর ঘামে ভিজে গেল কারন এত উপরে উঠা অনেক কষ্টকর,এইটা শুধুমাত্র যারা গিয়েছেন,তারাই বুঝতে পারবেন।
সেই মুহূর্তের জন্য এইসব সব হল অমৃত সুধা।কারন উঠতে উঠতে আপনি হাপিয়ে উঠবেন আর এইগুলোই একমাত্র খাদ্য যা আপনাকে উপরে উঠার জন্য শক্তি জোগাবে।
প্রায় ঘন্টা দেড় পর আমরা পৌঁছলাম প্রথম পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে রয়েছে শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির।
৫ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে। সেখানেও নাকি একটা মন্দির আছে নাম, চন্দ্রনাথ মন্দির। বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের ১৫০ ফুট রাস্তার প্রায় ১০০ ফুটই আপনাকে উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে। সেখানে নিজেকে সামলে রাখা অনেকটাই কষ্টকর।
অবশেষে খাড়া পাহাড় বেয়ে মাটি থেকে ১১৫২ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠলাম আমরা।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখাঁ যায়। এই ঝর্ণার কাছ থেকে পাহাড়ে উঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পুরোটাতেই পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের পথটি সম্পূর্নই পাহাড়ি। সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামুলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামাতে সহজ হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫২ ফুট। হেঁটে উঠতে একটু পরিশ্রমের কাজ হলেও আপনার হাঁটার উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ লাগবে। সাধারণত ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত সময় লাগবে আসতে ধীরে উঠলে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরেই চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে এবং চূড়ায় মন্দিরের কাছে ছোট টং দোকান আছে সেগুলিতে হালকা খাবার এবং পূজা দেয়ার উপকরণ পাওয়া যায় এবং দাম একটু বেশী, তবে ভালো হয় উঠার সময় সাথে পর্যাপ্ত পানি ও কিছু শুকনো খাবার সাথে রাখলে।
পাহাড় থেকে নিচে নামার সময়ও আপনি মুগ্ধ হবেন। কারণ, এই পাহাড়ের দুটি রাস্তা রয়েছে। আপনি যদি আগে বিরূপাক্ষ মন্দির হয়ে উঠেন সেটা হবে আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, চন্দ্রনাথ মন্দির থেকে নামার রাস্তার সিড়ির ধাপগুলো অনেক বড় বড়। এই পথে উঠতে গেলে আপনাকে খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাবেন। অবশেষে চন্দ্রনাথ মন্দির পাহাড় ঘুরা শেষ
দেখলাম হাতে এখনো অনেক সময় বাকি আছে,তাই আবার সিদ্ধান্ত নিলাম চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে কিছু দূরে সীতাকুন্ড ইকো পার্ক এ যাব।তাই তাড়াতাড়ি চলে গেলাম সীতাকুণ্ড বাজারে আর একটা খাবারে হোটেল এ গিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করলাম আর
রওয়ানা দিলাম ইকোপার্ক এ যাওয়ার উদ্দেশ্য ।
সীতাকুণ্ড পৌরসদর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে গেলেই ফকিরহাট এলাকায় সীতাকুণ্ড বোটানিকেল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। প্রধান সড়ক থেকে পূর্বদিকে এক কিলোমিটার রাস্তা গেলেই ইকোপার্কের প্রধান গেইট। এখানে আগত দর্শনার্থীদের একটু থামতে হবে। কারণ, জনপ্রতি ৩০ টাকা করে টিকিট কাটতে হবে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিটের মূল্যে ছাড় রয়েছে। এরপরই পার্কের সৌন্দর্য পথ মেলে যাবে আপনার সামনে। প্রধান গেইট দিয়ে পার্কে ঢুকলেই পর্যটন অফিস। অফিসের সামনে প্রস্তর ফলকে উৎকীর্ণ আছে ইকোপার্কের মানচিত্র। সুদৃশ্য ল্যান্ডস্কেপ থেকে দর্শনীয় স্থানগুলো বাছাই করে নিতে পারেন। বিস্তারিত জানতে বোটানিক্যাল কার্যালয়ে স্থাপিত মিনি লাইব্রেরী থেকে একটু পড়াশুনাও করে নিতে পারেন। অফিসের পাশেই রয়েছে অর্কিড গার্ডেন ও গোলাপ বাগান। ভ্রমণের শুরুতে কিংবা ফেরার পথে তা দেখে নিতে ভুলবেন না একদম !
কিছুদুর উঠলেই রয়েছে সুপ্তধারা জলপ্রপাত। ঝর্ণার সিগ্ধতা পেতে হলে সিঁড়ি ধরে নেমে যান পাহাড়ের তলদেশে। বেশ কিছু সিঁড়ি অতিক্রম করলেই একটি ছাউনি। সেখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে পাহাড়ি ঢাল বেঁয়ে নিচে নামতে হবে সর্তকতার সাথে। না হলে গড়িয়ে পাহাড়ের গভীর তলদেশে পড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে হলে নিচে না নেমে উপায় নেই। বোটানিক্যাল গার্ডেনের শেষ সীমপার্কের উত্তর পাশেই রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির। সর্বশেষে সবকিছু মিলে বলা যায় অপরূপ সৌন্দর্য্যে সীতাকুণ্ডের বোটানিক্যাল গার্ডেন ইকোপার্ক।
ঘুরে ঘুরে পার্ক এর সৌন্দর্য উপলব্ধি করলাম, প্রকৃতপক্ষে আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে,তাই সাথে মুটু-পাতলুর 😁 মুর্তি এর সাথে কয়েকখানা ছবিও নিলাম স্মৃতি হিসেবে।
পত্রিকাতে অথবা অনলাইনে বসে নিউজ পড়লে হবে কি? সত্যিকারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রসের সুগন্ধ পেতে, উপরে যা বললাম তা দেখতে চলে আসুন এবং ঘুরে যান যান সীতাকুণ্ডের ইকোপার্কে আর চন্দ্রনাথ পাহাড়ে।
এখন যাচ্ছি, তবে যাচ্ছি না । আবার লিখব ভালো অন্য আরেকটি আনন্দ ভ্রমনে নিয়ে,ভালো থাকবেন আর সাথেই থাকবেন
❤️ফেইসবুকে আমি ❤️
Avishake Barua Shawon
সবাইকে ধন্যবাদ। সুস্থ্য থাকুন,ভালো থাকুন এবং সব সময় সাথেই থাকুন 🙂
0 মন্তব্যসমূহ